চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বিদ্যুৎ বিভাগের অস্থায়ী হেলপার শিমুল ভৌমিক (৩৪) জেনারেল পোস্ট অফিসে (জিপিও) একটি ভুয়া এফডিআর বই ছাপিয়ে বিতরণের অভিযোগে ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যান। ফলে চাকরির নিয়ম অনুযায়ী তিনি সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে নিয়মিত চাকরি করছেন। পুলিশ তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে, আদালতে মামলা বিচারাধীন।
বর্তমানে শিমুল ভৌমিক চসিকের দামপাড়া কার্যালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগে চাকরি করছেন। বিষয়টি জানিয়ে সুদীপ্ত দে নামে এক ব্যক্তি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সচিব ও চসিক প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন।
এর আগে মাহমুদুল হক নামে চসিকের একজন কর আদায়কারী পটিয়ায় বিএনপির মিছিল থেকে গাড়ি ভাঙচুর করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন। জ্বালাও-পোড়াও মামলায় তিনি ছয় মাস জেল খেটে চসিকে যোগ দেন। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দেন, জ-িসে ভুগছিলেন বলে কাজে যোগ দিতে পারেননি। তবে প্রশাসনের তদন্তে তিনি দোষী সাব্যস্ত হলে চাকরি যায়। সে সময় তিনি পটিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মাহমুদুল হক পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে মামলা থেকে রেহাই পেলেও চসিকের চাকরি আর ফিরে পাননি।
চসিকের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন আমাদের সময়কে বলেন, অনেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা আছে বলে শুনেছি। তাদের বিভাগীয় প্রধানদের বলেছি বিষয়টি দ্রুত লিখিতভাবে জানাতে। অনেক বিভাগীয় প্রধান এ ধরনের অপরাধীদের দোষ আড়াল করার চেষ্টা করছেন।
চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের আরেক অস্থায়ী হেলপার রতন কুমার দাশকে চলতি বছরের ২৭ জুলাই পুরকৌশলে পদোন্নতি দিয়ে সড়ক তদারককারী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে বদলির সুযোগ নেই। কিন্তু এসব অনিয়ম অনেকটা গা সওয়া হয়ে গেছে চসিকে।
জানতে চাইলে চসিকের সচিব আবু শাহেদ চৌধুরী বলেন, বিষয়গুলো আমাদের একটু তদন্ত করে দেখতে হবে।
চসিকের নিয়োগের ক্ষেত্রে এ ধরনের নানা অনিয়ম ধরা পড়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। বর্তমানে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দৈনিকভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এর কারণ হিসেবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, দৈনিকভিত্তিক নিয়োগ করা কর্মচারীরা পরবর্তী সময়ে আদালতের শরণাপন্ন হলে চাকরি স্থায়ী করার জন্য আদালত নির্দেশ দেন। ফলে রাজস্বে বড় চাপ পড়ে। এর পরিবর্তে সরকার নতুন নিয়ম করে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এসব লোক নিয়োগের বিধান জারি করে। কিন্তু এই নিয়ম না মেনে চসিকে গত জুলাইয়ে দৈনিক ভিত্তিতে ২৭
জন বৈদ্যুতিক হেলপার ও একজন বাতি পরিদর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব নিয়োগের ব্যাপারে কোনো গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়নি। বর্তমানে চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগে বৈদ্যুতিক হেলপারের অনুমোদিত পদ আছে ১৩৯টি। এর বিপরীতে কর্মরত ২৪৭ জন। তার পরও নতুন করে ২৭ জন হেলপার নিয়োগের পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনই মূল কারণ বলে অভিযোগ।
এ প্রসঙ্গে চসিকের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করব।
জানা গেছে, জুলাইয়ে বৈদ্যুতিক হেলপার হিসেবে এদের নিয়োগ দেওয়া হলেও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদের শেষ দিনে গত ৫ আগস্ট তাদের মধ্যে সাতজনকে বিদ্যুৎ বিভাগ ও প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে পদায়ন করা হয়। এসব পদের মধ্যে আছে মিটার রিডার, অফিস সহকারী, কম্পিউটার অপারেটর ও লিফট অপারেটর। বৈদ্যুতিক হেলপার পদটি চতুর্থ শ্রেণির হলেও তাদের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে পদায়ন করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হেলপার পদে কাউকে নিতে হলে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে অষ্টম শ্রেণি। কিন্তু নেওয়া হয়েছে ¯œাতক থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার পর্যন্ত। তথ্য গোপন করে এসব লোককে নিয়োগ দেওয়ার পর তাদের পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দাপ্তরিক দায়িত্ব দেওয়া হয়।
চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ আমাদের সময়কে বলেন, ফৌজদারি অপরাধী কাজ করছেন যদি বলেন, তা হলে বলব, এ ধরনের অনেক অপরাধী কাজ করছেন। বিষয়টি সংস্থাপন বিভাগকে না জানানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই সময় আমি দেশে ছিলাম না। বাইরে ছিলাম। আর দৈনিকভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগের সিদ্ধান্ত চসিকের সংস্থাপন শাখার, বিদ্যুৎ বিভাগের নয়।
Leave a Reply